আজ শুক্রবার, ২৬শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নির্বাচন এলে ঘুম ভাঙ্গে তার

সংবাদচর্চা রিপোর্ট
স্কুল শিক্ষক আর বাম রাজনীতি দিয়ে শুরু হলেও আওয়ামী লীগ হয়ে শেষতক থিতু হন বিএনপিতে। এ দলের মনোনয়নেই সাংসদ হওয়ার ভাগ্য বরাতে জুটে মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনের। এখনও দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সদস্য পদে থাকলেও দলীয় কর্মকান্ডে তেমন দেখা যায় না তাকে। দলের নেতাকর্মীদের মতে, নির্বাচন এলে ঘুম ভাঙ্গে এ নেতার।

২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ – ৪ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন গিয়াসউদ্দিন। দলের একটি অংশ তার সময়কার এ আসনের চিত্র সম্পর্কে ‘কেরামন-কাতিমনের’ যুগ বলে অবহিত করেন। ওই জামান-সেলিম নামের তার দুই ঘনিষ্ঠ এ নামে পরিচিত পান। এছাড়া ফজলু কেরানি, আক্তারসহ আরও একাধিক পিএস, এপিএস পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সেক্টর নিয়ন্ত্রন করতো।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী বোর্ড নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে মনোনয়ন দিয়েছিলো গিয়াসউদ্দিনকে। পরে তার হাতছাড়া হয়ে সে মনোনয়ন পান শামীম ওসমান। এ নিয়ে পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতকালে এ দু’জনের বিরোধ চরমে উঠে। এক পর্যায়ে কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতির পদ ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেন গিয়াস। ২০০১ এ বিএনপি প্রথমে চলচিত্র ব্যবসায়ী সফর আলী ভুইয়াকে মনোনয়ন দেয়। মনোনয়ন পেয়ে পোস্টারও সাটানো হয় সফর আলীর পক্ষে। সূত্র জানায়, দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার খুশীতে জেলা ছাত্রদলের তৎকালিন সভাপতি জাকির খানকে একটি সাদা রঙের প্রাইভেটকার কিনে দেন সফর আলী। তবে পরে তার মনোনয়ন বাতিল করে গিয়াসউদ্দিনকে দেয় বিএনপি। এর পেছনে শিল্পপতি মোহাম্মদ আলীর হাত রয়েছে বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা রয়েছে।

পরে এমপি হয়ে প্রথম মোহাম্মদ আলীর সাথেই বিরোধে জড়িয়ে পড়েন গিয়াসউদ্দিন। বিরোধ এমন পর্যায়ে যায় যে, গিয়াসের অনুগত একজন মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে চেইন ছিনতাইয়ের মামলা করেন। বিশ্লেষক ও দলের অনেক নেতার মতে, মোহাম্মদ আলীকে দিয়ে বিএনপির দরজা চিনলেও পরবর্তীতে তারেক রহমানের সাথে তার সখ্য হয়ে যায়। দলীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, এমপি থাকাকালীন গিয়াস বিএনপির অনেক নেতাকর্মীকে বাদ দিয়ে নিজের অনুগতদের নিয়ে কমিটি করান। বিরোধী হলেই দলের নেতাকর্মীদের মামলা দিয়ে হয়রাণী করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এই সাবেক এমপিকে আরেক বিএনপি নেতা এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের ছোট ভাই ব্যবসায়ী সাব্বির আলম খন্দকার হত্যা মামলায় হুকুমের আসামী করা হয়েছিলো।

ওয়ান ইলেভেনের পর ৯ম সংসদ নির্বাচনে গিয়াসের বদলে ধানের শীষের মনোনয়ন পান শিল্পপতি শাহ আলম। এরপর ১০ম সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে গেলে ফের মনোনয়নের জন্য চেষ্টা তদবির করেন গিয়াস। দল প্রথমে তিনজনকে মনোনয়ন দিলেও গিয়াসউদ্দিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম কিনেন। তবে শেষতক আর নির্বাচন করেননি তিনি।
দলীয় সূত্র জানায়, থানা, জেলা থেকে শুরু করে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য পদে আছেন গিয়াসউদ্দিন। দলের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, পদে থাকলেও দলীয় কর্মকান্ডে দেখা যায় না তাকে। অঢেল বাড়ি ভাড়া, ব্যবসা আর নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়েই ব্যস্ত থাকেন এই বিএনপি নেতা।

সর্বশেষ সংবাদ